ঘূর্ণিঝড় আইডা আঘাত হানার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে আরও ১১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় ও আকস্মিক বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু হলো। সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
লুইজিয়ানা স্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় সময় বুধবার জানিয়েছে, ওই অঙ্গরাজ্যে নিহত ১১ জনের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় অতিরিক্ত গরমের কারণে মারা গেছে।
লুইজিয়ানায় ঘূর্ণিঝড় আইডার কারণে মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নার্সিং হোমে থাকা সাত জন রয়েছেন। তাঁরা নার্সিং হোম থেকে একটি ওয়্যারহাউসে স্থানান্তরিত হচ্ছিলেন। ওই ওয়্যারহাউসে সাতটি নার্সিং হোমের ৮০০ জন আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, ওই ওয়্যারহাউসে রোগীরা দুর্ভোগে রয়েছে এবং গাদাগাদি করে অবস্থান করছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আইডা ও আকস্মিক বন্যায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের।
ঘূর্ণিঝড় আইডা আঘাত হানার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঐতিহাসিক বিনিয়োগ’ প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু-সম্পর্কিত নানা বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে এবং দেশটি এই বিপর্যয়কে ‘জীবন-মৃত্যুর সংকট’ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এত ব্যাপক মাত্রায় ঝড় হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও বিজ্ঞান বলছে—সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে তার আশপাশের বাতাস উষ্ণতর হয়ে ওঠে এবং হারিকেন, সাইক্লোন ও টাইফুন (বিভিন্ন ধরনের ঘূর্ণিঝড়) হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে এ ধরনের দুর্যোগের সঙ্গে ভারী বর্ষণের আশঙ্কাও তৈরি হয়।
শিল্পযুগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ব এরই মধ্যে প্রায় এক দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতর হয়েছে। এবং এই তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে যদি না বিশ্বের দেশগুলোর সরকার কার্বনসহ ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ব্যাপক হারে হ্রাস না করে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেছেন, ‘আমাদের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো উচিত যে—আক্ষরিক অর্থেই সবদিক থেকে পরিস্থিতির অবনতি হবে।’
এ ছাড়া নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচাল বলেছেন : ‘আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে—(১ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৫০ থেকে ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে আক্ষরিক অর্থে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হবে এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মতো পানি নিউইয়র্কের রাস্তায় চলে আসবে।’
বন্যায় নিউইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক স্টেশন বন্ধ ছিল এবং কিছু অংশে সাবওয়ে চলাচলও বন্ধ ছিল।
কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে নিউইয়র্কের রাস্তায় গাড়ি ভেসে যাচ্ছে, এবং গাড়ির ভেতর থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকারও শোনা যাচ্ছিল।
কোনো কোনো জায়গায় বাস, উড়োজাহাজ ও ট্রেনের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় আটকে থাকতে হয়েছে।
নিউইয়র্কের পুলিশ লোকজনকে রাস্তায় না যেতে পরামর্শ দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে, নগরীর নানা প্রান্ত থেকে আসা সাহায্যের আবেদনে তাদের সাড়া দিতে হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আইডা ২৯ আগস্ট লুইজিয়ানায় আঘাত হানার পর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল ধরে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এই ঘুর্ণিঝড়টি ছিল ক্যাটাগরি চার মাত্রার।